যত ষড়যন্ত্র ছিল পদ্মা সেতু ঘিরে

আর মাত্র চার দিন পর উদ্বোধন হচ্ছে বাঙালির গৌরবের প্রতীক পদ্মা সেতু। কিন্তু একটু পেছনে ফিরলে দেখা যায় এ সেতু ঘিরে ছিল নানা ষড়যন্ত্র। ছিল দুর্নীতির কল্পিত অভিযোগ। গত ১২ জুন পদ্মা সেতু পাড়ে সেসব ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অভিযোগের বিস্তারিত তুলে ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, দুর্নীতিচেষ্টার ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংকের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, রাজনৈতিক বাদানুবাদ, গুজব, জটিল রকমের প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে নিজস্ব অর্থায়নে বাঙালির গর্বের পদ্মা সেতু নির্মাণের একক কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তার হাতেই ২১ বছর আগে ২০০১ সালে পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছিল, আগামী ২৫ জুন উদ্বোধনও করবেন তিনি।
২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তাচ্ছিল্য করে বলেছিলেন, পদ্মা সেতু এই আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। জোড়াতালি দিয়ে বানানো সেতুতে কেউ উঠবেও না। এরপর একের পর এক পদ্মা সেতু বিরোধী মন্তব্য আসতে থাকে বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে। রাজনৈতিক বিরোধিতার সুরে তাল মিলিয়ে ‘কান নিয়ে গেছে চিলে’ এমন রব তোলেন সুশীল সমাজের কয়েক জনও।
পদ্মা সেতু বিরোধী নানা মহলের সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানকে। সে সময়ে সংবাদমাধ্যমে ড. মসিউর রহমান আর্তি জানিয়ে বলেছিলেন, আপনাদের কাছে আমি সহানুভূতি চাই। আপনারা আমাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন। শেষমেশ বাধ্যতামূলক ছুটিতে যেতে হয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টাকে, দেড় মাস জেল খাটেন সেতু সচিব, ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি পদত্যাগই করতে হয় তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে। দফায় দফায় তাদের হাজিরা দিতে হয় দুদকে। আরেকটু পেছনে ফেরা যাক, সেতুর অর্থায়নে শুরুতে যোগ দেয় বিশ্বব্যাংক। উন্নয়ন সংস্থাগুলো যোগ দিতে থাকে অর্থায়নে। এরপর কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন থেকে সরে যেতে থাকে সংস্থাগুলো। তাদের একটার পর একটা আবদার রক্ষার চেষ্টা করেও বিশ্বব্যাংককে ফেরানো যায়নি পদ্মায়।
গত ১৬ জুন এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ হারিয়ে ক্ষুব্ধ নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের তদবিরের কারণেই দুর্নীতিচেষ্টার মিথ্যে অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংক সরে দাঁড়িয়েছিল। ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রায় দেয় কানাডার আদালত। রায়ে বলা হয়, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ গালগপ্প ছাড়া কিছুই নয়।