লাফিয়ে বাড়ছে করোনা এক মাসে শনাক্ত দুই লাখের বেশি

দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে আরো ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৫০১ জন। শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ। সংক্রমণের দিক থেকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা। জানুয়ারি মাসেই সংক্রমণের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর মৃত্যু হয়েছে ৩১১ জনের। সোমবার (৩১ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন মারা যাওয়া ৩১ জনকে নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৩৯৪ জনের। আর মোট শনাক্ত হয়েছেন ১৭ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩৩ জন। জানুয়ারি মাসের ৩০ দিনে দেশে রেকর্ড করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ৩ হাজার ৩৪৬ জন। এটা দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। দেশে মোট করোনা শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ।
গত একদিনে ২ হাজার ৫৬৮ জন করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হলেন মোট ১৫ লাখ ৬৮ হাজার ২১৩ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ১৮ শতাংশ, আর মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত একদিনে করোনার নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ৪৫ হাজার ২৮৪টি, আর নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪৫ হাজার ৩৫৮টি। দেশে এখন পর্যন্ত করোনার মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি ২৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮২টি।
এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা হয়েছে ৮৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫১১টি, আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪০ লাখ পাঁচ হাজার ১৭১টি। নতুন মারা যাওয়া ৩১ জনের মধ্যে ২১ জনই ঢাকা বিভাগের। বাকিদের মধ্যে খুলনা বিভাগের আছেন পাঁচ জন, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের আছেন তিন জন করে, চট্টগ্রাম বিভাগের দুইজন এবং রাজশাহী বিভাগের আছেন একজন।
তাদের মধ্যে ২৬ জন মারা গেছেন সরকারি হাসপাতালে। বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। মৃতদের মধ্যে পুরুষ ২০ জন ও নারী ১১ জন। তাদের নিয়ে দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মোট পুরুষ মারা গেছেন ১৮ হাজার ১৪১ জন, আর নারী ১০ হাজার ২৫৩ জন। বয়স বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে।
এই বয়সের মধ্যে মারা গেছেন সাতজন। ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ছয় জন, ৬১ থেকে ৭০ এবং ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে মারা গেছেন পাঁচ জন করে। ৪১ থেকে ৫০ বছর, ৯১ থেকে ১০০ এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে রয়েছেন দুইজন করে। আর ১১ থেকে ২০ বছর ও ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে রয়েছেন একজন করে।
করোনা সংক্রমণের দিক থেকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা। রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলায় রোগী শনাক্তের হার ৫০ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ প্রায় দুজনের নমুনা পরীক্ষায় একজন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। রোগী শনাক্তের হার বিবেচনায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলা ঠাকুরগাঁও। এই জেলায় শনাক্তের হার ৬৭ শতাংশ।
এছাড়া রংপুরে নতুন রোগী শনাক্তের হার ৬২ শতাংশ, পঞ্চগড়ে ৫৪ শতাংশ ও দিনাজপুরে ৫০ শতাংশ। রোগী শনাক্তের দিক থেকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলার মধ্যে আরো রয়েছে রাজশাহী (৬২%), নওগাঁ (৫২%), বাগেরহাট (৫৪%), দিনাজপুর (৫০%) গাজীপুর (৫৭%), রাজবাড়ী (৫০%) ও বান্দরবান (৫০%)।
নাটোর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, মেহেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাঙামাটি, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ এবং হবিগঞ্জে ৪০ শতাংশের ওপরে নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তৃতীয় ঢেউয়ে দেশে বেশি ছড়াচ্ছে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন।
পাশাপাশি দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় ছড়ানো ডেল্টাও রয়েছে। ওমিক্রনে মৃত্যু কম হলেও ডেল্টার কথা ভেবে দেশবাসীকে সতর্ক করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে বিধিনিষেধ চলাকালেও মাস্ক পরা, জটলা না করা, বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী তা তোলার নির্দেশগুলোর বাস্তবায়ন হচ্ছে না বললেই চলে।